খুলনা ব্যুরো।।
খুলনার তেরখাদায় ৫বছরের শিশু কন্যা তানিশা হত্যা মামলায় সৎ মা তিথী আক্তার মুক্তাকে ফাঁসি দিয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী কাটগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এ মামলাটি সাত কার্য দিবসে বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা গেছে, নিহত তানিশার বাবা তেরখাদার আড়কান্দী গ্রামের খাজা শেখ বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়নে কর্মরত। তিনি সাত বছর আগে একই উপজেলার আক্কাস শেখের মেয়ে তাসলিমাকে বিয়ে করেছিলেন। পরে দাম্পত্য কলহের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। আর দেড় বছর আগে তিথী আক্তার মুক্তা বেগমকে বিয়ে করেন খাজা শেখ।তিথী আক্তার মুক্তা স্বামী খাজা শেখের অবর্তমানে প্রায়ই মোবাইল ফোন, ম্যাসেঞ্জার ও ইমোতে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া লেগে থাকত। ফারাবী প্রসেনজিৎ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভয়েস চ্যাটিংয়ের বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব একপর্যায়ে চরম আকারে পৌঁছে যায়। ২০২১ সালের ০২ এপ্রিল ইমোতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে স্বামী খাজা শেখ তাকে তালাকের হুমকিও দেয়। পরে এক পর্যায়ে তানিশাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে মুক্তা। ঘটনার দিন ৬ এপ্রিল রাতে তাদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে খাজা শেখ এলাকায় বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। ওই দিন রাতে বারান্দায় সেলাই মেশিনের ওপর একটি দা নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে মুক্তা। সে সময় তানিশা খাটে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমন্ত তানিশাকে দা দিয়ে গলায় ও মাথায় কুপিয়ে জখম করে। দাপাদাপির শব্দ শুনতে পেয়ে দাদী ও চাচা এগিয়ে এলে দরজা খুলে ঘরের বাইরে চলে আসে মুক্তা।শিশুটিকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তানিশাকে মৃত ঘোষণা করেন।পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুক্তাকে আটক করে। জব্দ করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা।এ ব্যাপারে নিহতের দাদা বাদি হয়ে তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বছরের ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামি করে এ হত্যা মামলা চার্জশিট দাখিল করেন।
স্বামীকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুক্তা এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। আদালত মোট ২২ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষে এ রায় ঘোষনা করেন।##