দীপক রায় :
গ্রাম বাংলায় একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে,“বেড়ায় যদি খন্দ খায় সে খন্দ রক্ষা করবে কে”? সম্প্রতি অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং সময়ের দাবিও বটে।দিন যত যাচ্ছে ম্যালথাসবাদের সূত্রকে সত্যি প্রমান করে জনসংখ্যা গানিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জনসংখ্যা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা গ্রাম শহর বন্দর সবখানে গেলে সহজ মানুষ তার সাধারণ দৃষ্টিতেই অনুমান করতে পারে।
জনসংখ্যা যতই বাড়ুক দেশের আয়তন এবং স্থলভাগ তো আর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাই যা ঘটার তাই ঘটছে। মানুষ যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানেই দখল নিতে চাচ্ছে। প্রতিনিয়ত দেশের হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি বসতভিটা, কল-কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে ফলে দেশে কৃষি জমির পরিমান কমে গিয়ে খাদ্যোৎপাদন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। সরকার পক্ষ থেকে বার বার কৃষি জমিতে শিল্প কারখানা না করার তাগিদ দিলেও কে শোনে কার কথা। উল্টে যে দল যখন ক্ষমতায় আসে সে দলের অনুসারিরা দখলদারিত্বে মেতে ওঠে। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রিক উচ্ছেদ অভিযানে এটা ভালোভাবে জানাজানি হয়েছে যে, অবৈধভাবে ভুমি দখল করে, রাতারাতি টাকার মনুষ হয়ে কারা নিরীহ সাধারণ মানুষের নেতা সেজেছে। আর যাই হোক অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে ভন্ডদের আসল চেহারাটা কিন্তু বেরিয়ে পড়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে এখন আর নদী নেই। ভরাট হয়ে যাওয়া নদী দখল হয়ে সেখানে উঠেছে ক্ষমতাধরদের বিলাশবহুল বাড়ী, শিল্প কল-কারখানা ও ব্যবসাকেন্দ্র। নদীর বুকের পাথর বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে একদল লোভি অসাধু ব্যবসায়ী রাতারাতি কালোটাকার মালিক হয়েছে। আর প্রশাসন তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ খেয়ে দিবালোকেও দেখে না দেখার ভান করে ঘুমিয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর জমি এক রাতে তো আর দখল হয়নি। তাহলে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রশাসন টের পেলো না কেন ? এ প্রশ্ন এখন সবার। অন্যদিকে দেশের বহু প্রান্তিক ছিন্নমুল জনগণ তারা আবাসনের জন্য একটু জায়গা না পেয়ে রাস্তার ধারে নদীর পাড়ে বস্তি ও ছোট ছোট ঘর-বাড়ী তুলে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এর ফলে যা হয়েছে, সেটি এখন আরও পরিস্কার। জনসংখ্যা অনুপাতে রাস্তা নেই, ছোট রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন রাস্তায় প্রাণ ঝরছে। নদী হারিয়ে যাওয়ায় কৃষি জমিতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, ঝড়, অতিবৃষ্টি, ক্ষরা ও বন্যার মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ এখন আমাদের নিত্যসাথী হয়েছে। মানুষের দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে দূর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এখন কথা হল, অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান কি শুধু শহরেই সিমাবদ্ধ থাকবে? দেশের সার্বিক কল্যানে গ্রামকেও মুক্ত করা দরকার। শহরের মত গ্রামেও অবৈধ দখলদাররা তাদের শক্ত থাবা গেড়েছে। প্রকৃত ভুমিহীনরা সরকারী খাস জমি পায় না অথচ এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালিরা দখল করে নিচ্ছে নদী, খাল, হাট-বাজার ওয়াপদাসহ সরকারের সকল খাস জমি। এখানেও মোটা অংকের টাকানিয়ে সব অবৈধকে বৈধ করে দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও ভুমি অফিস। ফলে এলাকায় ভুমিহীনদের পূনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থাা হচ্ছে না।এতে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করেও দিন দিন ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে বই কমছে না। কথা উঠেছে, সরকার সারাদেশে ফুটপাথ থেকে গরিব হকারদের উচ্ছেদ করেছে কিন্তু তাদের বিকল্প জীবিকার পথ সরকার করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে । তাই অনেকের মতে এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্য থেকে দেশ পিছনের দিকে হাঁটছে। প্রসঙ্গত গ্রামেও বহু ক্ষরস্রোতা নদী নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়েছে, সেখানে দখল করে গড়ে উঠেছে বিত্তশালীদের কাকড়া ও চিড়ী ঘের, হাট-বাজার। সেখান থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দরিদ্র অতিদরিদ্র মানুষদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছু নেই। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ তাই এখনও মনে করে “ওরা সরকারের দল করে, তাই সরকারের খাস জমির মালিকও ওরা”।
গ্রামের সাধারণ মানুষের এ ধারণাকে বদলে দিতে হবে সরকারকে। সকল অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ করতে হবে দখলদারদের। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে এদের। কোনো রাজনৈতিক দলের অথবা সরকারি কোনো কাজে নিয়োজিত থাকলে তাকে সেখান থেকে বহিস্কার করতে হবে। যেন আগামীতে কেহ এ ধরণের হীন কাজ করতে এবং অংশ নিতে সাহস না পায়। সাথে সাথে সমাজের ভুমিহীনদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তাদের বাঁচার অনুকুল পরিবেশ সৃাষ্ট করে দেওয়া তাতে ভিক্ষুক ও দরিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে দেশ অনেকটা এগিয়ে যাবে।
দেশের মানুষের মন ও মননে এখন আওয়ামীলীগ সরকার। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কতিপয় বিপদগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে তিনি স্বপরিবারে নিহত হন তাই সোনার বাংলা গড়া তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তাঁর যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে দেশ সম্মৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর সঙ্গত কারনেই দেশের মানুষ তাদের সুখ দুঃখের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে থাকেন। ইতোমধ্যেই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে অনেক অসহায় মানুষ জরুরী চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন দূর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা পেয়ে জীবণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। দেশের অধিকাংশ নাগরিকের প্রত্যাশা তিনি নিশ্চই দেশের সবখান থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবেন। নদী খাল মুক্ত করে তিনি অবশ্যই সেগুলি খনন করবেন, আবার চাষিরা মাঠে সময়মত পানি পাবে। ফলবে সোনার ফসল, আবার ফুটবে কৃষকের মুখে হাসি। ক্ষুধা ও দরিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শহর ও গ্রামের মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। আর সেদিন হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবের সোনার বাংলা পৃথিবীর বুকে সম্মৃদ্ধি ও সম্মানে মাথা উচু করে দাঁড়াবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক