খুলনা :
কলেজ শিক্ষক সমীরণ মজুদার রোববার বিকেলে তার সন্তান ধ্রুব জ্যোতি মজুমার কে নিয়ে আসেন জাদুঘরে। উদ্দেশ্য চিত্রপদর্শনী দেখা। জাদুঘর মিলনায়তনে প্রবেশ করেই বাবাকে আকড়ে ধরে আনন্দে উদ্বেলিত ধ্রুবর গড় গড় আবৃতি ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। তার পর ধাপে ধাপে সিড়ি পেরিয়ে ১থেকে ২৭টি ছবি দেখা। ছোট্ট এই সোনমনির জিজ্ঞাসা তার বাবার কাছে এত বড় ছবি কেন ? বইতে তো ছোট ছোট ছবি দেখি ? বাবার উত্তের প্রদর্শনীতে বড় ছবিই দিতে হয়। আবার প্রশ্ন, আমি একটি নিতে চাই। বাবার উত্তর তোমায় কিনে দিবো।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নিয়ে খুলনায় অনুষ্ঠিত তিন দিন ব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী “Bangabandhu: Statesman of the Era” দর্শনার্থী ধ্রুব বাবার তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জানান, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। প্রদর্শনীর জন্য যে ছবিগুলো বাছাই করা হয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ। এছাড়া গেট থেকে শুরু করে প্রদর্শনীর স্থান পর্যন্ত সুসজ্জিত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে গোটা পরিবেশ যেন বাঙালীর অস্তিত্বরে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ একাই এসেছিলেন প্রদর্শনীতে। কথা হয় তার সাথে। কিছুক্ষণ পরে বলেন, ভুল হয়ে গেছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসতে হতো। তার মতে, অসাধারণ এই প্রদর্শনী। কোমতি নেই কোন জায়গা। ছবির বাছাইও চমৎকার। এই আয়োজন দুই দেশের মানুষের আত্মিক সম্পর্কের অনন্য উদাহরণ। বেশি বেশি করে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতে সাথে আমাদের আত্মতিক সম্পর্ক রয়েছে। বেশি বেশি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা যেতে পারে। ভারতীয় দুতাবাসের এই আয়োজনকে তিনি দুই দেশের বন্ধুত্বের একটি মাইল ফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
এদিকে খুলনায় আয়োজিত প্রদর্শনী সম্পর্কে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাহীন জামান মনে করেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু রাষ্ট্র। জাতির পিতার ছবি নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনী দুই দেশের সম্পর্ক হৃদয়ের-আন্তরিক। তার অনুরোধ, বেশি বেশি করে দেশ দুটি যেন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিনিময় করে। শাহীন জামান পন, ফারুক আমদে, সমীরণ মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন দর্শক মনে করেন, একসাথে বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধুর ২৭টি ছবি দেখার সুযোগ থাকায় প্রদর্শনীর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাছাড়া দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের আকা ছবি ছবি এতে স্থান পেয়েছে। আকার মাধ্যমও ভিন্ন ভিন্ন। তাই এ পর্যন্ত খুলনায় অনুষ্ঠিত সকল চিত্রপ্রদর্শনীকে ছাপিয়ে এগিয়ে রয়েছে “Bangabandhu: Statesman of the Era” শিরোনামের এই প্রদর্শনীটি।
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর মিলনায়তনে খুলনাস্থ ভারতীয় সহকারী দুতাবাস, ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার এবং শিল্পকলা একাডেমি ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত এই চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীতে দেশ বরেণ্য যে সকল চিত্রশিল্পীদের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে তারা হলেন, আবদুল মান্নান, মোঃ মুনিরুজ্জামান, সৈয়দা মাহবুবা করিম মিনি, কাদের ভূঁইয়া, সঞ্জিব দাস অপু, কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাস, প্রশান্ত কর্মকার বুদ্ধ, এস এম মিজানুর রহমান, মোঃ জাকির হোসেন পুলোক, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী এবং মানিক বোনিক। মিডিয়া পার্টনার ছিলো দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো, অনলাইন নিউজ পোর্টাল পুবের আকাশ এবং এইম বাংলা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক তালুকদার খুলনাস্থা ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন মুহুর্ত থেকে শেষ দিন পর্যন্ত খুলনা মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ আসেন। খুলনাসহ দেশের জাতীয় পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন ও নিউজ পোর্টালগুলো ব্যাপক প্রচার করে। বিশেষ করে মিডিয়া পার্টনার সময়ের আলো প্রতিদিন স্টোরী করে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
এদিকে তিন দিন ব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী সুন্দরভাবে সমাপ্ত হওয়ায় খুলনাস্থা সহকারী হাইকমিশনার রাজেশ কুমার রাইনা সম্পৃক্ত সকলকে ধন্যবাদ জানান।