মোঃ মাসুদুর রহমান শেখ, বেনাপোলঃ
বিভিন্ন সময় ভালো কাজের প্রলোভনে ভারতে পাচার হওয়া ১২ জন বাংলাদেশি নারী, শিশু ও কিশোরকে দেশে হস্তান্তর করেছে ভারত সরকার। এদের মধ্যে তিন জন নারী সাত জন কিশোর, দুই জন শিশু রয়েছে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫ টার সময় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ট্রাভেল পারমিটে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ফেরত আসারা হলেন, বাগেরহাট জেলার শাফিকুল ইসলাম, রুবাইয়া ফারজানা, সাইফুল হাওলাদার রাকিব, আরিফ সিকদার, সাদ্দাম শেখ,রাহিলা বেগম, আছমা খাতুন, আইশা খাতুন,খুলনা জেলার কাকুলি খাতুন, শাহিসশা কাজি, বরগুনা জেলার মৌসুমি বেগম ও ইসমাইল খান।
পাচারের শিকার বাগেরহাটের সাইফুল হাওলাদার রাকিব নামে এক কিশোর জানান, তাদেরকে ভালো কাজের কথা বলে বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকার হাবিব খান নামে এক দালাল ভারতের ব্যাঙ্গালুরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের দিয়ে পাথর ভাঙ্গার কাজ দেয়। তাদের কাজের বিনিময়ে শুধু মাত্র থাকতে ও খেতে দিতো। তাছাড়া কোনো টাকা দিতো না। এভাবে এক বছর কাজ করার পর ব্যাঙ্গালুর পুলিশ তাকে আটক করে। পরবর্তীতে তালাশ নামের একটি এনজিও সংস্থা ছাড়িয়ে নিয়ে তাদের কাছে রাখে। এখন তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
ভারত ফেরত আসমা খাতুন বলেন, সে যখন বুঝতর পারলো সে প্রতারিত হয়েছে অনেকবা দেশে ফিরতে চেয়েছে তবে হাবিব খান তাকে ফিরতে দেয়নি। বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করতো সে। পাথরঘাটার যুবক ইসমাইল সর্দার জানান, কাজে যেতে না পারলে করতো অমানবিক শারিরীক নির্যাতন। পাথর ভাঙা কাজ দিয়ে কোন মাসে দেয়নি বেতন। পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে ছাড়ানোর নামে দেশে থাকা পরিবারকে জিম্মী করে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছে। কিন্তু ছাড়াইনি। এসব টাকায় দালাল হাবিব খান দেশে করেছে সম্পদের পাহাড়।
ফেরত আসা, নারী, পুরুষদের গ্রহনকারী জাস্টিস এন্ড কেয়ারের প্রোগ্রামার অফিসার এ বি এম মুহিত হোসেন জানান, আমরা ছয় জন ও রাইটস যশোর ছয় জনকে গ্রহন করেছি। এবং তাদেরকে যশোর নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় দালালের প্রোলভনে পড়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে ব্যাঙ্গালুরে পাচার হয়। পরে ব্যাঙ্গালুর পুলিশ সেখান থেকে তাদেরকে আটক করে। এরা সেখানে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত তারা জেলে ছিলো। পরবর্তীতে ব্যাঙ্গালুরের তালাশ নামে একটি বেসরকারী এনজিও সংস্থা তাদের কে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের শেল্টার হোমে রাখে। এরপর দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে এদেরকে ট্রাভেল পারমিটে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব জানান, তাদেরকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ ট্রাভেল পারমিটে মাধ্যমে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কাগজ পত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এদেরকে জাস্টিস এন্ড কেয়ার ও রাইটস যশোর নামে দুটি এনজিও সংস্থা গ্রহন করেছে। পরবর্তীতে এনজিও সংস্থা তাদের পরিবারে কাছে হস্তান্তর করবে বলে তিনি জানান।