স্টাফ রিপোর্টার :
খুলনা মহনগীর খানজাহান আলী থানার যোগীপোল এলাকায় পুলিশ কনেষ্টবল মোঃ মাহমুদ আলম কর্তৃক নির্মম নির্যাতিত করে জোয়ানা আক্তার উষা হত্যা মামলার পলাতক আসামী। মোঃ জবেদ আলী ও মোসাম্মাৎ লুৎফুননেছাকে গ্রেফতার ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার দ্রুত চার্জশীট দাখিলের দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদী পাইকগাছার কালিদাসপুর গ্রামের জিএম সোহেল ইসলাম।
গতকাল শনিবার ২৭ এপ্রিল সকালে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানিয়ে বলেন, আসামীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া তার খুনী মোঃ মাহমুদ আল কে পাগল বানিয়ে হত্যা মামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছর ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমরা সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার জামালনগর গ্রামের পুলিশ কনেষ্টবল (এপিবিএন) মোঃ মাহমুদ আলমের সাথে জাকজমকপূর্নভাবে বিয়ে দেই। বিয়ের সময় আমরা স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল দেই। কিন্তু আমার লোভী দুলাভাই বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য আমার বোনকে চাপ দিতো এবং কারণে অকারণে মারধোর করতো। আমার বোনকে হত্যার দুই মাস আগে সে খুলনায় নিয়ে আসে। মহনগীর খানজাহান আলী থানার যোগীপোল এলাকায় ফকির মনিরুল ইসলামের বাড়ী ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে।
এরপর একটি মোটর সাইকেল যৌতুক দেওয়ার জন্য আমার বোনের সাথে র্দুব্যবহার ও কারণে অকারণে মারধোর করতে থাকে। আমার বোনের উপর নির্যাতনের বিষয়টি তার বাবা মা জানতেন, কিন্তু প্রতিবাদ করা বা ছেলেকে বোঝানোতো দুরের কথা- নির্যাতন করতে ছেলেকে উৎসাহ যোগাতেন। আমরা একাধিকবার নির্যাতন বন্ধ করার মাহমুদ আলমের বাবা-মাকে জানানো সত্তেও তারা কোন প্রতিবাদ করেনি। বরং ছেলেকে যৌতুক পাওয়ার জন্য আরো উৎসাহ দিত। এ অবস্থায় গত ৫ এপ্রিল ১৯ইং তারিখে রাতে আমার বোন জোয়ানা আক্তার উষাকে বেধরক মারপিট করে। পরের দিন ৬ এপ্রিল সকালে আমার বোন মোবাইল ফোনে আমার মাকে নির্যাতনের ঘটনা জানায় এবং আমাকে খুলনায় আসতে বলে। এরপর ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মোঃ মাহমুদ আলম পুলিশ লাইনে গিয়ে হাজিরা দিয়ে পুনরায় সকাল ৯টার দিকে বাসায় এসে আমার বোনকে কিল, ঘুষি, লাথি, গলায় কামড়সহ প্রচন্ড শারিরীক নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার বোন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন মোঃ মাহমুদ আলম আমার অচেতন বোনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আমি পাইকগাছা থেকে রওয়ানা দিয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে বোনের বাসার সন্নিকটে পৌছালে মোঃ মাহমুদ আলমের সাথে দেখা হয়। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করি কোথায় যাচ্ছো। সে তখন বলে গোসল করতে যাচ্ছি, তোমার বোন রান্না করছে। তখন আমি বলি দ্রুত এসো একসাথে তিন জন দুপুরের খাবার খাব। তখন তিনি চলে যান। এরপর আমি বাসায় গিয়ে কয়েকবার বোনকে ডাকাডাকি করে না পেয়ে ফোন দেই। কিন্তু রিসিভ না করায় ঘরে প্রবেস করে দেখি বোন গায়ে কাথা দিয়ে শুয়ে আছে। তখন তার গায়ে হালকা নাড়া দেই। কিন্তু সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশের ভারাটিয়া ফরিদা পারভীনকে ডাক দেই। তিনি এসে বোনের মুখে পানি ছিটিয়ে দেন। এরপর তিনি বলেন দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আমি দ্রুত পুলিশ লাইনের গেটে গিয়ে মোঃ মাহমুদ আলমকে ডাকতে বলি। এরপর তাকে প্রথমে পুলিশ লাইনের ডাক্তারকে দেখাই এবং পরে তার পরামর্শে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছে।
এরপর মোঃ মাহমুদ আলমের কাছে জানতে চাইলে সে আমার বোনকে হত্যা করেছে বলে উপস্থিত পুলিশ ও লোকজনের সামনে স্বীকার করে। এর পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওই দিনই আমি বাদী হয়ে তিন জনকে আসামী করে খানজাহান আলী থানায় জোয়ানা আক্তার উষা হত্যা মামলা দায়ের করি।
তিনি আরো বলেন, ঘাতক লম্পট মোঃ মাহমুদ আলম ইতোমধ্যেই হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। কিন্তু হত্যাকান্ডের তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এ মামলার অপর দুই আসামী মোঃ মাহমুদ আলমের বাবা মোঃ জবেদ আলী ও মাতা মোসাম্মাৎ লুৎফুননেছা এখনও গ্রেফতার হয়নি। যা খুবই দুখঃজনক। কারণ বাবা মায়ের উৎসাহে তার কুলঙ্গার সন্তান এই নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
বর্তমানে আসামীরা পলাতক থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া আমরা জানতে পেরেছি যে মোঃ মাহমুদ আলমকে পাগল সাজানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাকে পাগল বানিয়ে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।