অফিস :
খুলনার লবণচরা থানার বুড়ো মৌলবীর এলাকায় চাঞ্চল্য কর বাবা ও মেয়ের ডাবল মার্ডার মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দিয়েছে আদালত। ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেলে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোঃ মহিদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো-সাইফুল ইসলাম পিটিল, মোঃ লিটন, আবু সাঈদ, আজিজুর রহমান পলাশ ও আসামি শরিফুল ইসলাম। এর মধ্যে ০৪ জন কারাগারে ও আসামি শরিফুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার ৩নং গলির ঢাকাইয়া হাউজ এপি ভিলা নামের বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক্সিম ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণের পর হত্যা এবং তার বাবা ইলিয়াছ চৌধূরীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দূবৃর্ত্তরা। পরে বাড়ীর সেফটি ট্যাংকির মধ্যে বাবা ও মেয়ের মরদেহ ফেলে দেয়। ঘটনার পরদিন পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। পরে নিহত ইলিয়াস চৌধুরীল ছেলে রেজা আলম চৌধুরী বিপ্লব বাদী হয়ে তার বাবাকে হত্যা এবং বোনকে ধর্ষনের পর হত্যার ঘটনায় লবনচরা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। দুই মামলায় লবনচরা থানার এসআই কাজী বাবুল হোসেন ২০১৬ সালের মে ও সেপ্টেম্বর মাসে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। আদালত হত্যা মামলায় ২১জন এবং ধর্ষন করে হত্যা মামলায় ২৭জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন করে। আসামিদের মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বর্ণনা রয়েছে।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে মামলাটির যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হয়। মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৫ জনের মধ্যে ৪ জন গ্রেফতার হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় পিটিলের স্ত্রী আসমা খাতুন, নোয়াব আলি গাজী ও আসলাম মিস্ত্রি নামের একজন সন্দেহভাজনকে। তাদের মধ্যে লিটন ও সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা।
মঙ্গলবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক এবং সাক্ষ্য প্রমান সাপেক্ষে নারী ও শিশু নিযার্তন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক মোহাম্মদ মহিদুজ্জামান ইলিয়াস চৌধুরী হত্যা মামলায় পাচ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদন্ড, ১০হাজার টাকা জরিমানা ও গুম করে রাখার দায়ে আরও সাতবছরের কারাদন্ডাদশে এবং পারভীণ সুলতানাকে ধর্ষন করে হত্যা ঘটনায় পাচজনকে মৃত্যুদন্ড ও একলাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়।
বহুল আলোচিত এ হত্যাকান্ডের ৩ বছর ৯ মাস ২৭ দিন পর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ৩নং ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা করা হল।এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন স্পেশাল পিপি এড. ফরিদ আহমেদ। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তায় রয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে এড. কাজী সাব্বির আহমেদ, এড. মোমিনুল ইসলাম, এড. তসলিমা খাতুন ও এড. কুদরত-ই-খুদা।
মামলার রায় ঘোষনার পর বাদী রেজা আলম চৌধুরী বিপ্লব সন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চআদালতেও এ রায় বহাল থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। মামলায় বাদীপক্ষকে সহায়তাকারী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এড. মোমিনুল ইসলাম জানান, তারাও আদালতের রায়ে সন্তুষ্ঠ। উচ্চ আদালতেও তারা বাদীপক্ষকে আইনগত সহায়তা প্রদান করবেন।