খুলনা অফিস ।।
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার ৯২২টি পরিবারসহ ৬৬ হাজার একশ ৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের হাতে জমিসহ ঘর প্রদান করেছেন। এই পরিবার গুলোর মধ্যে দিন মজুর, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় গৃহিনী, প্রতিবন্ধী, ভ্যানচালক ও ভিক্ষুক রয়েছেন। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেসিং-এর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ৬৪ জেলায় ৪৯২ উপজেলায় একযোগে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ভূমিহীন-গৃহহীন এসকল পরিবারের কাছে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছেন।এই ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের কাঠালতলা গ্রামে একশত চল্লিশ জন উপকারভোগীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, কেএমপি কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, খুলনা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, এডিসি(রাজস্ব) জিয়াউর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, ডুমুরিয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ ডুমুরিয়া প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর পেয়ে আনন্দে কেদে ফেলেন উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা।জমিসহ ঘর পাওয়া পরিবারগুরোর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। ডুমুরিয়ার আটলিয়া ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের রিনা পারভীন জমিসহ ঘর পাওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও দীর্ঘায়ু কামনা করে জানান, তিনি জীবনের অর্ধেকের বেশী সময় রাস্তায়, ফুটপথে ও বেড়িবাধে জীভন কাটিয়েছেন।জীবনে কখনও পাকা ঘরে থাকতে পারবেন এমন আশা করেননি। প্রধানমন্ত্রীল কাছ থেকে জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে বাকী জীবনটুকু নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবেন বলে আশা করছেন।
বস্তিবাসী মুক্তিযোদ্ধা অশোক দাস জমিসহ ঘর পাবার আনন্দ যেন অশ্রু হয়ে ঝরছে তার। তিনি জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম।স্বাধীনতার র্দীঘ ৫০বছরেও তিনি নিজের ও পরিবারের জন্য মাথা গোজার ঠাই করতে পারেননি। পুরাতন জুমা সেলাই করে তিনি ঝুপড়ি ঘরে থেকে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। জীবন সায়াহ্নে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া জমিসহ ঘর পেয়ে যেন স্বাধীনতার স্বপ্ন সাধ পুরন হয়েছে। জমিসহ ঘর পেয়ে আনন্দিত হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল কুলসুম বেগমও।তিনি জানান, যখন জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাকে জমিসহ ঘর দিচ্ছেন তখনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছেন। তিনি অসুস্থ্য স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বেড়িবাধে ও পরের জমিতে ৩০বছর কাটিয়েছেন। এখন জমিসহ ঘর পেয়ে বাকী জীবনটা নিজেদের ঘরেই কাটাবে পারবেন এটা ভেবেই আনন্দাশ্রু থামছে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।শুধুই এরা নয়-জমিসহ ঘর পাওয়া সবাই যেন সথ্যিকার অর্থেই জীবনে সোনার হরিনের খোজ পেয়েছেন।
জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত উদ্যোগে একক গৃহ ও ব্যারাকের মাধ্যমে একসাথে ভুমিহীণ ও ঘরহীন ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদানের ঘটনা বিশ্বে প্রথম। সারা বাংলাদেশে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া মাত্র তিন মাসে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য দুইকক্ষ বিশিষ্ট একটি করে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।দ্বিতীয় পর্যায়ে খুলনা জেলার ভুমি ও গৃহহীন আরও দেড় হাজার পরিবারের ঘর নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে।দ্রুতই এগুলোর অনুমোদন পাওয়া যাবে।খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৫হাজার ৮৮জন ভুমিহীণ ও ঘরহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জিমিসহ ঘর প্রদান করা হবে বলেও তিনি জানান। ##